টাঙ্গাইল-৮ আসনটি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তমের নির্বাচনী এলাকা। বাসাইল এবং সখীপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত এই নির্বাচনী আসন। এ আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৬৪৫ জন। বিএনপির হেভিয়েট প্রার্থী বলে পরিচিত দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. আহমেদ আযম খান এ আসন থেকে নির্বাচন করে আসছেন। এই আসনটির বর্তমান এমপি প্রধানমন্ত্রীর স্নেহধন্য অনুপম শাহজাহান জয়। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রার্থীরা বাসাইল-সখীপুরের আনাচে-কানাচে সভা-সমাবেশসহ নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করলেও বিরোধীদের কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। সম্প্রতি বাসাইল ও সখীপুরে বিএনপি-জামায়াতের কয়েকজন নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়ে জেলহাজতে আছেন বলে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের মধ্যে আটক আতঙ্ক বিরাজ করছে। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বিরোত্তম ঐক্যফ্রন্টে যোগদান করার পর তিনি এ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হওয়ায় ভোটারদের মধ্যে নির্বাচনী কৌতূহল বেড়েছে।
কাদের সিদ্দিকী বিরোত্তম আওয়ামী লীগ থেকে বের হয়ে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ প্রতিষ্ঠার পর এই আসনটি সাধারণ ভোটারদের কাছে বঙ্গবীরের মাঠ বলে পরিচিতি পেয়েছে। বঙ্গবীরের আসনটিতে নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী থাকায় ত্রিমুখী লড়াইয়ের কারণে জাতীয় নির্বাচনে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। তা ছাড়া বৃহৎ দুই দলের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তিরা এই আসনের কাজকর্ম সরাসরি মনিটরিং করেন বলে মনোনয়ন প্রতিযোগীদের বক্তব্যে জানা গেছে।
১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হুমায়ূন খালিদ, ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী মুর্শেদ আলী খান পন্নী, ১৯৮৬ সালে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কৃষিবিদ শওকত মোমেন শাহজাহান, ১৯৮৮ সালে চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মোর্শেদ আলী খান পন্নী, ১৯৯১ সালে পঞ্চম এবং ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী হুমায়ূন খান পন্নী, ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বিরোত্তম, ১৯৯৯ সালের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শওকত মোমেন শাহজাহান, ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ প্রার্থী বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বিরোত্তম, ২০০৮ সালে নবম এবং ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শওকত মোমেন শাহজাহান নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ভোটারবিহীন নির্বাচনে শওকত মোমেন শাহজাহান নির্বাচিত হওয়ার ক’সপ্তাহ পরই তার মৃত্যু হয় এবং উপনির্বাচনে তারই ছেলে অনুপম শাহজাহান জয় বিজয়ী হন। এবারও তিনি নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। সমর্থকদের দাবি গত পাঁচ বছরে বাসাইল-সখীপুরের সর্বত্রই সুষম উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। এলাকার রাস্তাঘাট, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সোলার প্যানেল, মসজিদ, মন্দির ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন উন্নয়নের মাধ্যমে তিনি জনগণের আস্থা অর্জন করেছেন বলে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এবারো তিনি দলীয় মনোনয়ন পাবেন।
আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, এরশাদবিরোধী আন্দোলনে টাঙ্গাইলের অগ্রদূত বলে খ্যাত করটিয়া সরকারি সা’দৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইবারের সাবেক ভিপি অ্যাড. জোয়াহেরুল ইসলাম। বাসাইল-সখীপুরের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার মূলে তার দক্ষ প্রার্থী বাছাইকেই প্রকৃত কারণ বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগ রাজনীতির মাঠে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। গণসংযোগ, মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা, কুশল বিনিময়ে তিনি মাঠে সময় পার করছেন। এসব কারণে বাসাইল-সখীপুরের নেতাকর্মীদের মাঝে রয়েছে তার ব্যাপক প্রভাব। সমর্থকদের দাবি, নির্বাচনে উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ের একমাত্র তার নেতৃত্বেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার বিজয় ধরে রাখা সম্ভব। তাই দলীয় মনোনয়নের প্রতিযোগিতায় তিনি জয়ী হবেন বলে তার সমর্থকদের দাবি।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বাসাইল-সখীপুরের বিএনপির রাজনীতির একমাত্র কর্ণধার হিসেবে পরিচিত অ্যাড. আহমেদ আযম খান এই আসনের প্রার্থী হিসেবে দুইবার নির্বাচন করেছেন। কিন্তু সুবিধা করে উঠতে পারেননি। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন আযম খানই পাবেন বলে তাদের বিশ্বাস।
এ বছর বাসাইল উপজেলা বিএনপির দুইবারের সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী শহিদুল ইসলাম বাসাইল প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সস্মেলনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নের প্রত্যাশী বলে ঘোষণা দেন। তখন থেকেই বাসাইল-সখীপুরে তিনি তার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। তা ছাড়া সম্প্রতি বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির কোনো কোনোটি তার নেতৃত্বে পালন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। বাসাইল-সখীপুরের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করছেন, কর্মীদের সঙ্ঘবদ্ধ করে বিএনপির জন্য কাজ করে যেতে নির্দেশনা দিচ্ছেন বলে তিনি মনোনয়নের প্রতিযোগিতায় জয়ী হবেন বলে তার সমর্থকদের দাবি।
সম্প্রতি কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বিরোত্তম ঐক্যফ্রন্টে চলে আসার পর এ আসনের বিভিন্ন দলীয় প্রার্থীদের হিসাব-নিকাশ বদলে গেছে। প্রাণ ফিরে পেয়েছেন বঙ্গবীরের কর্মী-সমর্থক এবং বঙ্গবীরপ্রেমী সাধারণ মানুষ। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাসাইল-সখীপুর ছিল তার প্রাণকেন্দ্র। যে কারণে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি ফিরিয়ে দিতে এই আসনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বিরোত্তম নির্বাচন করবেন বলে জানান কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান খোকা বীরপ্রতীক। বঙ্গবীর সমর্থকরা জানান, উপনির্বাচনে কারচুপির পর থেকে এটা বঙ্গবীরের নির্বাচনী মাঠ বলে সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিতি পেয়েছে, তাই আমাদের প্রচারণাও চলছে বঙ্গবীরের নামের ওপর।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে বাংলাদেশ শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম খান, তাঁত বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী এ কে এম আসাদুল হক তালুকদার, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের ভাইস চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আতাউল মাহমুদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য সরকার মুহ: আরিফুজ্জামান ফারুক, সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত শিকদার, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কার্যকরী সংসদের সাবেক সদস্য অধ্যক্ষ সাঈদ আজাদ আওয়ামী লীগের মনোনয়নের প্রতিযোগিতায় বাসাইল-সখীপুরে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ধর্মীয়, সামাজিক প্রতিষ্ঠানসহ মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা ও গণসংযোগে তারাও ব্যস্ত সময় পার করছেন।
বিএনপি থেকে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ওবায়দুল হক নাসির, জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন শিল্পবিষয়ক সম্পাদক ও সখীপুর উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শেখ মোহাম্মদ হাবিব, জাতীয় পার্টির (এরশাদ) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব কাজী আশরাফ সিদ্দিকী ও ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির (এনপিপি) সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বাদল তাদের দলের ব্যানারে মনোনয়ন পেতে প্রতিযোগিতা করছেন।